শুরু থেকেই দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে অন্তর্বর্তী সরকার : সোহরাব হোসেন
প্রকাশ: ৯:১০ পূর্বাহ্ণ জুলাই ১৩, ২০২৫

জালালাবাদ বার্তা:
অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কবি সোহরাব হাসান। তিনি বলেন, এই সরকার শুরু থেকেই প্রায় সব বিষয়ে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল এবং পাশের লোকে কিছু বলে। এটা কিন্তু খুব ভাবার বিষয়। লন্ডন বৈঠক হলো।
লন্ডন বৈঠকের আগে যে ঘটনা ঘটল, আমি তো মনে করি, এই সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন করা অর্থাৎ বাংলাদেশকে গণতন্ত্র উত্তরণের পথ পরিষ্কার করা। গণতন্ত্র সরকার দেবে না, গণতন্ত্র জনগণই তার ভোটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু সরকার সে পথটা তৈরি করবে, ব্যবস্থাপনার দায়িত্বের থাকবে নির্বাচন কমিশন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে মোটামুটি একটা সমঝোতা হয়ে গিয়েছিল।
এখন দেখলাম কয়েকটি দল আনুপাতিক হারে ভোট নিয়ে বেশ সরগরম। যেন এই আনুপাতিক হারে ভোট না হলে আর ভোট হবে না। তাহলে তো একটা অচল অবস্থা। জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা বললেন যে, এটা তাদের দলীয় এজেন্ডা, দলীয় দাবি।
তারা বলছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে তাদের আপত্তি নেই এবং এটাও এক ধরনের বলা যে বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন মেনে নিচ্ছে। যারা বলেছে যে আনুপাতিক হারে ভোট চাইছেন অর্থাৎ সেটা কিন্তু বিরাট একটা জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। তারাই আবার ২৯৬টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। আবার যারা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করবেন না বলছেন, তারা দেখা যাচ্ছে পদযাত্রার নামে জেলায় জেলায় যে জনসংযোগ করছে, সেখানে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরও নাম বলছে। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর এগুলো কৌশল হতেই পারে।
একে অপরের সমালোচনা করবে। নিজের মহিমা প্রচার করবে- এগুলো ঠিক আছে। কিন্তু সরকারের তো একটা অবস্থান থাকবে। কে কী বলল, এদিকে না তাকিয়ে, তাদের উচিত যে সঠিক কোনটা, ন্যায্য কোনটা! লন্ডন বৈঠকে যে দুটি বিষয়ে বলেছে যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হলে, বিচার এবং সংস্কার দুটো ক্ষেত্রেই কিন্তু দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং সংস্কারও চূড়ান্ত সমঝোতার কাছাকাছি অনেকগুলো বিষয় কিন্তু ঐকমত্য হয়েছে এবং বাকিগুলো হয়ে যাবে।
সোহরাব হাসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা বলছি যে তারা বিগত সরকারের আমলে অনেক অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিল, অনেক অপকর্ম করেছে- এ কারণে তারা এখনো পেশাদারি হতে পারেনি। কিন্তু পেশাদারি হতে গেলে যদি তারা বাধার সম্মুখীন হয়, যদি তারা অপদস্থ হয় এবং প্রত্যাহার হতে হয়, তাহলে অন্যেরাও তো এই বার্তাটা পাবে এবং এটি আওয়ামী লীগের ১৫ বছর দেখেছি, তার রাজনৈতিক সরকারের সময়ও দেখেছি। কিন্তু এই সরকারের সময় কিন্তু এটা প্রত্যাশিত নয়। কোনোভাবেই নয়। সরকার কারোর দিকে না তাকিয়ে, চোখ-কান বন্ধ করে যদি তার উপর অর্পিত দায়িত্বটা পালন করে, তাহলেই আমরা আশা করি যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটি হবে।
তিনি আরো বলেন, ধরে নিলাম সরকার ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে ফেব্রুয়ারিকে সময়সীমা ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, অস্থিরতা এবং এক ধরনের বৈদেশিক চাপ। এতদিন ছিল সীমান্তে চাপ। এখন তো সীমান্তের বাইরে চাপ। এই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে এবং একজন ব্যবসায়ী বললেন, বর্তমান যে ১৫-১৬ ভাগ শুল্ক আছে, এর সঙ্গে যদি যোগ হয় ৩৫ শতাংশ, তার মানে ৫০-৫১ শতাংশ হয়। এতে বাংলাদেশ একটা বড় ঝুঁকিতে পড়বে। বাণিজ্য আলোচনা চলছে এবং আশা করি, হয়ত কিছুটা ছাড় পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ৫ শতাংশ পেলে তো লাভ হলো না, তাহলে থাকবে ৩০ শতাংশ এবং ১৬ শতাংশ- মানে ৪৬ শতাংশ। তাহলে রপ্তানি অনেকাংশে কমে যাবে। অর্থনীতিবিদরা ইতোমধ্যে বলেছেন, সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। কারণ এতটা শুল্ক আরোপ করার কথা নয়।
রিপোর্ট: জালালাবাদ বার্তা২৪/এস.ডি/ নিউজ সোর্স-কালের কন্ঠ