এম ফাহিম, চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

ভোলার চরফ্যাসন ও লালমোহন উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত বেতুয়া খাল (সাবেক বেতুয়া নদী) আজ মৃতপ্রায়। বেহুন্দি, কারেন্ট, খুঁচি, ম্যাজিক, সুতিজাল, ভেসাল ও চায়না রিং জালের দৌরাত্ম্যে ধ্বংস হচ্ছে মাছের প্রজনন চক্র। নির্বিচারে ধরা পড়ছে ছোট মাছ ও ডিমওয়ালা মাছ। ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে খালের দেশি মাছ ও জলজ জীববৈচিত্র্য। একসময় এ খালে লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার ও নৌকা চলাচল করত। দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা নিয়মিত পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার করতেন এ জলপথ। কিন্তু বছরের পর বছর অবৈধ জাল বসিয়ে রাখায় জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। খালজুড়ে জমে থাকা কচুরিপানা স্থায়ীভাবে আটকে গেছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, দুই তীরের মানুষ ভুগছেন নানান রোগে। বেড়েছে মশার প্রজননও।

স্থানীয়রা জানান, একসময় বোয়াল, গজার, শোল, পাবদা, আইড়, খলসে, পুটি, ভেটকি, বাইলা, টাকি, টেংড়া প্রভৃতি দেশি মাছের প্রাচুর্য ছিল এই খালে। বর্ষার মৌসুমে মাছ ডিম ছাড়ার আগেই এসব নিষিদ্ধ জালে ধরা পড়ে যাচ্ছে, ফলে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে এবং বহু প্রজাতি আজ বিলুপ্তির পথে।

ভূঁইয়ারহাট, জনতা বাজার, চরফ্যাসন বাজার ও লালমোহনের বিভিন্ন বাজারে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ এসব জাল। প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

চরফ্যাসন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, “অবৈধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। এগুলো বন্ধে শুধু প্রশাসন নয়, সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।”

চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি জানান, “মৎস্য কর্মকর্তাকে নিয়মিত অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ জাল জব্দ করে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।”

পরিবেশবাদীরা বলছেন, খাল বাঁচাতে শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নয়, জনসচেতনতা জরুরি। স্থানীয় জনগণ ও জেলেদের সহযোগিতা ছাড়া বেতুয়া খালে দেশি মাছের প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।