- জালালাবাদ বার্তা - https://www.jalalabadbarta24.com -

আদালতে বিচারকের সামনেই সাংবাদিককে মারধর

ঢাকার শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান পান্নার জামিন শুনানিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এক সাংবাদিক। 

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাস পিয়াসের আদালতে বিকালে এ ঘটনা ঘটে।

বিচারক এজলাসে থাকাকালে বেসরকারি টেলিভিশন ‘সময় টিভি’র আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম নামে ওই সাংবাদিককে কয়েকজন আইনজীবী মিলে কিল, ঘুসি ও লাথি মারেন। এতে গুরুত্বর আহত হয়েছেন সিয়াম। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি প্রোগ্রাম থেকে লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়। শুক্রবার শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

বৃহস্পতিবার লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক পান্নার জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। লতিফ সিদ্দিকীতে আদালতে হাজির করা না হলেও সাংবাদিক পান্নাকে আদালতে হাজির করা হয়।

এ সংবাদ সংগ্রহ করতে আদালতে যান কয়েকজন সাংবাদিক। ২ টা ৫৫ মিনিটের দিকে সাংবাদিক পান্নাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৮ম তলায় ৩০ নম্বর এজলাসে তোলা হয়।

এ সময় বাংলা আউটলুকের বিশেষ প্রতিনিধি মোক্তাদির রশীদ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান পান্নার কাছে জানতে চান, কারাগারে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা। এ সময় এজলাসের বেঞ্চে বসে থাকা অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন মাহি আসামির সঙ্গে কথা বলার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। বিষয়টা নিয়ে কিছুটা তর্ক-বিতর্ক হয় তাদের। এ সময় তাকে আদালত থেকে বের হয়ে যেতে বলেন অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন।

ওই সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান, আপনি কোর্ট ইন্সপেক্টর কিনা? আমাকে বেরিয়ে যেতে বলছেন। বিচারক বললে আমি বেরিয়ে যাব।

এরই মধ্যে বিচারক এজলাসে ওঠেন। শাহবাগ থানার একটা মামলার শুনানি শুরু হয়।

এ সময় একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সময় টিভির রিপোর্টার সিয়াম এসে ওই আইনজীবীকে বলেন, উনি বহিরাগত না, একজন সাংবাদিক। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠে কানের ওপর ঘুসি মারেন। এ সময় সিয়াম তার হাতে থাকা সময় টিভির মাইক্রোফোন উঠিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। তবে আইনজীবী তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসেন। সিয়াম কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার কয়েকজন সহযোগীসহ তাকে ঘিরে মারধর শুরু করেন। এতে গুরুতর আহত হন সিয়াম। 

এ সময় আদালত কক্ষে এ পরিস্থিতি দেখে এজলাস থেকে নেমে খাসকামড়ায় চলে যান বিচারক। পরে প্রসিকিউশনের পক্ষে থাকা কাইয়ুম হোসেন নয়ন ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে তাকে সাক্ষীর কাঠগড়ার কাছে নিয়ে যান। 

এ বিষয়ে সিয়াম বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই বিচারকের সামনে মব সৃষ্টি আমাকে মারধর করল কয়েকজন আইনজীবী। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’ 

অপর সাংবাদিক মোক্তাদির রশিদ রোমিও বলেন, হেলমেট, হ্যান্ডকাফ ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে পুলিশের বাঁশি ফু দিতে দিতে  আদালতে হাজির করা হয় সাংবাদিক পান্নাকে। তাকে প্রচণ্ড বিধ্বস্ত দেখেছি। হেলমেট খোলার পরে পান্না পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন- আপনার এমন কেন করছেন। আমি তো আপনাদের শত্রু নই। এ সময়ে কাছে দাঁড়িয়ে থাকায় আমি সাংবাদিক পান্নাকে জিজ্ঞেস করি- ভাই আপনাকে কি জেলের ভেতরে নির্যাতন করা হয়েছে? সাংবাদিক পান্না উত্তর দেন ‘না’। ঠিক এ সময়েই আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি আমাকে কোর্ট থেকে বের হয়ে যাওয়ার ধমকাতে থাকে। আমি বলি- আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র বিচারকের আছে। উনি বললে বের হয়ে যাব। উনাকে বলতে দিন।’ একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ওই আইনজীবী আমাকে মারতে উদ্ধত হলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন সাংবাদিক আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম তাকে নিভৃত করার চেষ্টা করে। কোর্টের নিয়ম রক্ষার জন্য আইনজীবীকে অনুরোধ করেন। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে, আইনজীবী সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম মারতে শুরু করে। ‌আর একই সঙ্গে আমাকে কুকুরের বাচ্চা শুয়োরের বাচ্চা বলতে থাকে। পাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। নিছক দর্শকের মতই তারা দেখছিল।

 

নিউজ সোর্স ও ছবি: যুগান্তর।